গল্পটা ইদে বাড়ি ফেরার - সৈয়ব আহমেদ সিয়াম

 

হাতিয়া দ্বীপ
ছবি: কমলার দিঘী সি বিচ, হাতিয়া, নোয়াখালি

কাকরাইল মসজিদের সামনের রাস্তাটায় হঠাৎ দেখি পুলিশ খুব অ্যালার্ট হয়ে কাজ টাজ করতেছে। তো এক বয়স্ক মুরুব্বী জিজ্ঞেস করলো, "কী হইছে বাবা?" 
: রাষ্ট্রপতি অসুস্থ। এই রোড দিয়ে ওনাকে নেওয়া হবে।
- রাষ্ট্রপতি কিডা? 
: আরে রাষ্ট্রপতি! রাষ্ট্রপতি! রাষ্ট্রপতি চিনেন না? 
- কিডা রাষ্ট্রপতি? না কইলে কেমনে চিনমু?
মুরুব্বীর কথা শুনে খানিকক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। উনি এসেছেন কাকরাইল মার্কাজে, বের হবেন তাবলীগের সফরে । এই বুড়ো বয়সে আর রাষ্ট্রপতি চিনে কীইবা করবে? থাক্ না হয়। এমনেই তো আছে সুখে। সুখ পাওয়ার জন্য কী সবাইরে চিনতে হয় নাকি?

ফার্স্ট ইয়ার, তখন থাকি আবাবিলের ১০৫ নাম্বার রুমে। এগারোটায় লাইট অফ করার নিয়ম হলেও আমি মানতাম না কোনো রুলস রেগুলেশন। রিয়াদ ভাইও কিছু বলতো না। ভাই অ্যান্ড্রয়েড ইউজ করে না। ইউজই তো করতে পারে না। রাতের তিন ভাগের এক ভাগ পড়ে টেক্সটবুক, এক ভাগ ঘুমায়, আরেক ভাগ কাটিয়ে দেয় জায়নামাজে। আর আমি তো কোনো কোনো দিন রাত দুটা অব্দি ঘুরে বেড়াতাম ক্যাম্পাসে। একাই ঘুরতাম। বসে থাকতাম স্টেশন মসজিদে। অক্সিজেন শূন্য মনে হতো পাহাড়, ঝর্ণা আর গাছপালায় আচ্ছাদিত এত্ত বড় ক্যাম্পাসও। দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার। কখনো বা কান্না করতাম। কারণ আগে তো কখনো থাকিনি এভাবে বাড়ি ছেড়ে। কেউ একজন বলেই ফেললো, "সিয়াম, তোমার হোমসিকনেস খুব বেশি।"

হোমসিকনেস! হোমসিকনেস! হোমসিকনেস! আরে এটা তো শুনতে একটা রোগের মতো মনে হচ্ছে। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা তাহলে একটা রোগ??? যাই হোক, এতদিনে হয় তো কাটিয়ে উঠেছি। আগের চেয়ে সুস্থ হয়েছি। লাস্ট কুরবানি ইদে দেখা করেছি মায়ের সাথে। এতদিন পর আবার ফিরছি রাজশাহীর পথে। যানজট টাইপ ভীড় আমার ভালো লাগে না একদমই। তারপরও ফিরবো বাড়ি। কারণ, এই ইদই আমার উৎসব, আমার ইবাদাত, আমার হাজার বছরের ঐতিহ্য।

দেশের দুই কোটি থ্যালাসেমিয়া বাহকের পক্ষ থেকে ইদের শুভেচ্ছা। থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশে একদিন ইদের নতুন চাঁদ উঠবে, ইনশাআল্লাহ। সেই চাঁদ আরো সুন্দর হবে। ওই চাঁদের ঝলমলে উদয় হয় তো দেখবো না চোখে। অগ্রীম সালাম সেই চাঁদকে। সেই নতুন বাংলাদেশকে। ইদ মুবারাক। তাক্বাবালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।

- সৈয়ব আহমেদ সিয়াম
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন